তোফায়েল আহমদ :
প্রবাসী এবং পর্যটক যাত্রীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরে। সিএনজি অটোরিকশাচালকদের একটি বড় সিন্ডিকেট দখলে নিয়েছে এর পার্কিং এরিয়াও। মোহাম্মদ নূর নামের এক রোহিঙ্গার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের বাইরে পার্কিং থেকে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যায় না। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কিছু আনসার সদস্যও সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেন।এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী যাত্রীদের কাছ থেকে।
দুই দিন সরেজমিনে গিয়েও বিমানবন্দরে যাত্রীদের হয়রানি এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাইট ঢাকার সঙ্গে আসা-যাওয়া করে। যাত্রীদের ৮০ শতাংশেরও বেশি হচ্ছেন পর্যটক ও প্রবাসী।
ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইট আসামাত্রই যাত্রীদের টানা-হেঁচড়া শুরু করে দেয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
গত সোমবার দুপুরে দুবাইগামী যাত্রী ছৈয়দুর রহমান কালের কণ্ঠকে অভিযোগ করে জানান, বোর্ডিং পাসের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছে টাকা দাবি করেন খোদ বাংলাদেশ বিমানের কর্মী এমরান। ব্যাগেজ স্ক্যানিং করার সময় কর্তব্যরত চারজন আনসার সদস্যও ছৈয়দুরকে ঘিরে ধরে টাকা দাবি করেন। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মুকতারকুল গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দুর গত ১৬ বছর ধরে দুবাইপ্রবাসী।নিজ দেশে এই হেনস্তায় তিনি ক্ষুব্ধ।
এ প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই ছৈয়দুর বিষয়টি বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আইনুল ইসলামকে জানান। তখন তিনি আশ্বাস দেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা তদারকিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের ৫৭ জন এবং আনসারের ১৮৯ জন সদস্য রয়েছেন। এত লোকবল থাকা সত্ত্বেও নানা অভিযোগ ওঠা অত্যন্ত দুঃখজনক।
গত সপ্তাহে শ্যামল নামের এক আনসার সদস্য বিমান থেকে নামা একজন পর্যটককে ওই সিন্ডিকেটের কাছে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি সিসি ক্যামেরায়ও ধরা পড়ে। এ কারণে ওই আনসার সদস্যকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন আনসারের প্লাটুন কমান্ডার মুফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তিন শিফটে ১৮৯ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এটা সত্যি। তবে আমরা ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি।’
এসব বিষয়ে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা হোসেন বলেন, ‘বিমানবন্দরের পরিধিসহ ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় কিছু অনিয়ম-অভিযোগের ঘটনা ঘটছে, তবে এসবের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’
বিমানবন্দরের পার্কিংয়েই রোহিঙ্গা নেতৃত্বের সিন্ডিকেটভুক্ত ট্যাক্সিগুলো রাখা হয়। সিন্ডিকেটের বাইরের অন্য কোনো যানবাহন পার্কিংয়ে না রাখার অলিখিত নিয়ম সেখানে চলে আসছে অনেক দিন ধরে। সিন্ডিকেটভুক্ত সিএনজি অটোরিকশার চালকরাই বিমানে আসা যাত্রীদের হোটেল-মোটেলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে হোটেলকক্ষ ভাড়া করে দেয়।
বিমানবন্দর থেকে শহরের হোটেল-মোটেল জোন কলাতলি সৈকত পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় যেতে ১০০ টাকা ভাড়া হলেও সিন্ডিকেট সদস্যরা আদায় করে দুই-তিন গুণ বেশি। এমনকি পর্যটকদের কৌশলে হোটেলের কক্ষ ভাড়া করিয়ে দিয়েও তারা আদায় করে থাকে কমিশনের টাকা। এভাবে বিমানযাত্রীদের ‘শিকার’ করে দৈনিক একেকজন সিন্ডিকেট সদস্য বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করে থাকে।
বিমানবন্দরের পার্কিংয়ের ইজারাদার জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ নূর বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় সিন্ডিকেট গঠন করে পর্যটকদের হয়রানি করে যাচ্ছে অথচ কারো কোনো উচ্চবাচ্য নেই।’
তবে অভিযুক্ত মোহাম্মদ নূর নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেননি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার জন্ম নাইক্ষ্যংছড়ির আলীকদম উপজেলায়। তবে আমার জন্ম নিবন্ধন নেই। আমরা পর্যটক হয়রানি করি না। সারা দিন পর্যটকের আশায় বসে থাকি, তাই অনেকের চেয়ে কিছু টাকা বেশি নিয়ে থাকি।’
-কালেরকন্ঠ
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।